ক্রোকাস স্যাটিভা (Crocus Sativa) নামক উদ্ভিদের ফুল শুকিয়ে জাফরান তৈরি হয়। ছোটো-বড় সকলের জন্য এটি নিরাপদ এবং অনায়াসে আপনার ডায়েটে যোগ করতে পারেন। মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত এই মশলা আপনার পছন্দের খাবারে যেমন অন্য স্বাদ এনে দেবে, তেমনই নানা শারীরিক সমস্যা হাত থেকে নিস্তার পাবেন।
জাফরানে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, ম্যাংগানিজ, যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর মধ্যে উপস্থিত রয়েছে ভিটামিন সি, যা শরীরকে ইনফেকশন বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। ত্বক ও চুলের যত্ন নেয়। এছাড়াও জাফরানের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে,
ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে একধরণের ক্যারোটিন থাকে যাকে ক্রোসিন বলা হয়। এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার কোষ, যেমন লিউকোমিয়া, ওভারিয়ান কারসিনোমা, কোলন অ্যাডনোকারসিনোমা ইত্যাদি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ক্রোসিন এর অন্যত উপাদান যা কেমোথেরাপিউটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ।
জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। শারীরিক দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এটি দারুণ কাজ দেয় ।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাফ্রানাল জাফরানের একটি উপাদান, রেটিনার ক্ষয় রোধ করে । এটি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং চোখের ছানি পড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। সেক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একগ্লাস গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে খান, দেখবেন ঘুম ভালো হবে ।
জাফরান আলজাইমার এবং পার্কিনসন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে রক্ষা করে । মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ ও বিষন্নতা মুক্ত রাখে।
জাফরানের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হার্টের সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ,
আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম,
জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোন বিকাশ করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় । উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও কার্যকরী ।
এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিক্যান্সার, অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক উপাদানগুলি গ্যাসের সমস্যা দূর করে। অ্যাসিডিটি থেকে রেহাই পাবেন ।
এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। যা পোড়া, কাটা সারাতে দারুণ কাজ দেয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর জাফরান। নিয়মিত এটি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং শরীরের উপর এর সুফল দেখতে পাবেন ।
পিরিয়ড শুরুর আগে যে অস্বস্তিভাব দেখা দেয়, তা দূর করে। পিরিয়ডের প্রচণ্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা দূর করতে এর জুড়ি নেই ।
যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা জাফরান ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে উপস্থিত ক্রোসিন নামক বায়োকেমিক্যাল লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
যৌনজীবন সুখময় করে তুলতে ডায়েটে যোগ করুন জাফরান। এর প্রাকৃতিক অ্যাফ্রোডিসিয়াক উপদান যৌন চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করে ।
চুল পড়ার সমস্যা দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই। চুলে জাফরান লাগালে চুল পড়া কম হবে, নতুন চুল গজাবে সেইসঙ্গে চুল হবে ঝলমলে এবং মজবুত।
কীভাবে ব্যবহার করবেন – অল্প দুধে কয়েকটা জাফরান ভিজিয়ে রাখুন। তাতে একটু মধু যোগ করুন। মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে স্কাল্পে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
গর্ভবতী মহিলাদের খাবারের তালিকায় জাফরান রাখার পরামর্শ দেন অনেকে। দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে খেলে গর্ভস্থ সন্তানের রং ফর্সা হয়, এমন বিশ্বাস চলে আসছে বহু যুগ ধরে। যদিও এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
সুন্দর ত্বক পেতে নিয়মিত জাফরান ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে, গায়ের রং পরিষ্কার করে তুলতে সাহায্য করে । তবে এর মাত্রারিক্ত ব্যবহার ত্বকের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতা পারে ।
No comments:
Post a Comment