শরীর রোগ মুক্ত ও কর্মক্ষম না হলে কোনো কাজই করা যায় না। সুতরাং শরীরকে সুস্থ ও কর্মে মনোযোগী করে তুলতে যোগ ব্যায়াম অভ্যাস অত্যন্ত জরুরী। প্রাচীন যুগে মনীষীরা ঈশ্বরের আরাধনা করতে গিয়ে বুঝেছিলেন শরীর ও মন সুস্থ না থাকলে, ভগবানের আরধাওনা করা কেনো, কোনো কাজই করা সম্ভব নয়। তাই তারা শরীর কে নিরোগ ও কর্মজোগী করে তুলতে নিয়মিত বিভিন্ন আসন ও মুদ্রার সাহায্য নিতেন।
স্বাস্থ্য রক্ষায় ও রোগারোগ্যে যোগ ব্যায়ামের অসীম কার্যকারিতাকে কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষ আজ সুস্থ সবল জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই তথ্য আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ও পত্রিকায় দেখেছি। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগ ব্যায়ামের বহুল প্রচার শুরু হয়েছে।
বর্তমানে যোগ ব্যায়ামের প্রচলন স্কুল কলেজের পাঠক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাতে ছাত্র ছাত্রীদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও দীর্ঘ জীবন লাভ এবং তাদের অধিক কর্মক্ষম ও সঠিক চরিত্র গঠন করায় সহায়তা করে।
খালি হাতে বা কোনো রকম ব্যায়ামাগার ছাড়াই কোয়েকটি ব্যায়াম অভ্যাস করলে একটি সুস্থ সবল সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, এর জন্য বাড়তি কোনো অর্থব্যয় করতে হবেনা, শুধু অল্প কিছু সময় ও একাগ্র মনের প্রয়োজন।
যৌগিক ব্যায়াম: বৈদিক মনি ঋষিরা বিভিন্ন যোগের মধ্যে যে চারটি যোগ ব্যায়ামেকে বিশেষ ভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন সেগুলো হলো ১. কর্মযোগ, ২. ভক্তিযোগ, ৩. জ্ঞানযোগ, ৪. রাজ যোগ।
যৌগিক ব্যায়াম দেহের ভিতরের বিভিন্ন গ্রন্থি সমূহ এবং স্নায়ুমন্ডল গুলিকে যে রকম পুষ্টি সাধন করতে ও সবল করতে সক্ষম অন্যকোনো ব্যায়াম সে ভাবে পারেনা।
কিছুদিন নিয়মিত যৌগিক ব্যায়াম অভ্যাস করলে মস্তিষ্কের ধারণ শক্তি বৃদ্ধি পায়, স্নায়ু সতেজ হয়, মাংসপেশী সবল হয়। ফলে বিভিন্ন কঠিন ও জটিল রোগ নিরাময় হয়। এছাড়া বিভিন্ন মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় এবং মনে একাগ্রতা আনতে যোগ ব্যায়াম অদ্বিতীয়।
অনেক সময় দেখা যায় স্নায়ুতন্ত্র গুলো ঠিক মতো পরিচালিত না হলে পেশী সমূহ কে ঠিক পরিচালনা করা সম্ভব হয়না। ব্যায়াম শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো মানব দেহের স্নায়ুতন্ত্রকে অধিকতর নিশ্চয়তা, নিষ্ঠা, নিয়ম, শৃঙ্খলতার সহিত পরিচালনে অভ্যস্ত করে তোলা।
মানব দেহের মস্তিষ্ক হলো স্নায়ুমন্ডলীর কেন্দ্রস্থল। এই স্থানটি থেকে যে আদেশ প্রেরিত হয় তা মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গেকে পরিচালিত করে।
স্নায়ুগুলো মূল মেরুদন্ডে অবস্থিত, তাই মানুষের যৌবন শক্তি ও জীবনীশক্তি মেরুদন্ডের সবলতা ও নমনীয়তার উপর নির্ভরশীল। মেরুদন্ডে যদি সঠিক ভাবে রক্ত চলাচল না হয় তবে স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে ও শরীরে জরাগ্রস্ত রোগ দেখা দেয়।
পৃথিবীর সব দেশের মানুষের একটাই লক্ষ্য হচ্ছে, কি উপায়ে মেরুদন্ডকে অধিক সবল ও মজবুত করতে করা যায় এবং মেরুদন্ডের মধ্য দিয়ে রক্তের চলাচল ঠিক রেখে বার্ধক্য ও জরা মতন ব্যাধিকে দূরে সরিয়ে রেখে অনেকদিন পর্যন্ত যৌবনকে ধরে রাখা যায়।
মেরুদন্ডকে সামনে পেছুনে ডাইনে ও বাঁয়ে বাঁকানো বা মচড়ানোর মাধ্যমে পুরো শরীরকে সুস্থ সবল রাখা সম্ভব, এ জন্য কয়েকটি ব্যায়াম বিশেষ ভাবে সাহায্য করে যেমন, অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন পূর্ণ্য মৎস্যেন্দ্রাসন, উষ্ট্রাসন, ভুজংগাসন, শলভাশন, ধনুরাশন, অর্ধচন্দ্রাসন, চক্রাসন প্রভৃতি।
এই আসন গুলির সাহায্যে মেরুদন্ডকে সামনে পেছনে বাঁকানোর সঙ্গে সঙ্গে যদি অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন নিয়মিত অভ্যাস করা যায় তবে স্পনডিলাইটিস রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকেনা।
No comments:
Post a Comment